বাংলাদেশী কমিউনিটি

তুরস্কে আমার প্রথম দিন: একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশ থেকে তুরস্কে যাত্রার পেছনে একটি গল্প আছে—শুধু স্কলারশিপের নয়, স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং নতুন জীবনের শুরুর গল্প।

বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক: যাত্রার শুরু

২০১৫ সাল। দেশের রাজনৈতিক ও শিক্ষার পরিবেশ শিক্ষার্থীবান্ধব ছিল না বললেই চলে। অনেকের মতো আমিও ভেবেছিলাম—বিদেশে উচ্চশিক্ষার কোনো পথ খুঁজে বের করতে হবে। IELTS প্রস্তুতির মধ্যেই জানতে পারি Türkiye Bursları, অর্থাৎ তুর্কি সরকারের স্কলারশিপ প্রোগ্রামের কথা।

আমার রেজাল্ট ও প্রোফাইল দেখে আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী, দিপু ভাই, বললেন, “আবেদন করেন, আপনার চান্স হবে ইনশাআল্লাহ।” তিনি আবেদন প্রক্রিয়ায় আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছিলেন। আমার একাডেমিক যাত্রায় তার অবদান সবসময় স্মরণীয় থাকবে।

Türkiye Bursları স্কলারশিপ ও প্রস্তুতির অভিজ্ঞতা

২০১৬ সালের শেষ দিকে, সব ধাপ পার করে অবশেষে আমি Türkiye Bursları-তে মনোনীত হলাম। ইন্টারভিউর আগে তুরস্কে থাকা সাব্বির ভাইয়ের কাছ থেকে আমি ভালোভাবে প্রস্তুতি নিই। ইন্টারভিউতে আমাকে আরবিতেও প্রশ্ন করা হয়েছিল, যেটা আমার জন্য নতুন হলেও চ্যালেঞ্জিং ছিল।

শেষ পর্যন্ত আমার গন্তব্য নির্ধারিত হলো: Süleyman Demirel University, থিওলজি বিভাগ। তখন তুরস্কে একটি সেনা অভ্যুত্থানের পরিস্থিতি চলছিল, ফলে আমাদের ভিসা ও ভ্রমণ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু এরদোয়ান সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে সব কিছু দ্রুত স্বাভাবিক হয়।

তুরস্কে প্রথমবার: Turkish Airlines ও অভিজ্ঞতা

ভিসা হাতে পাওয়ার পরই শুরু হলো আমার জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক যাত্রা। Turkish Airlines-এর TK777 ফ্লাইটে আমি সহ মোট ৫৩ জন বাংলাদেশি স্কলারশিপধারী যাত্রা করি। সেই ভ্রমণ ছিল একদিকে আনন্দঘন, অন্যদিকে পরিবার ছাড়ার বেদনায় ভারী।

প্রথমবার বিমানে ওঠা, কেবিন ক্রুদের হাসিমুখ, এবং তুর্কি খাবারের স্বাদ—সবকিছুই ছিল নতুন আর স্মরণীয়।

ইস্তানবুলে পৌঁছানো ও ডমেস্টিক ফ্লাইট অভিজ্ঞতা

দুপুর ১২:৪০-এ আমরা ইস্তানবুলে পৌঁছাই। সেখানে আমাদের সাহায্য করেন নাজমুল ভাইয়া, যিনি দ্রুত আমাদের ইস্পার্তার ডমেস্টিক ফ্লাইট ধরাতে চেষ্টা করেন। তবে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট মিস করে ফেলি। Turkish Airlines আমাদের জন্য একটি পাঁচতারা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়—এটা ছিল আমার জীবনের প্রথম হোটেল অভিজ্ঞতা।

ইসপার্তা: নতুন শহরে নতুন জীবন

পরদিন ইসপার্তায় পৌঁছেই দেখলাম, একমাত্র বাংলাদেশি সিনিয়র আব্দুর রউফ ভাই আমাদের রিসিভ করতে এসেছেন। ইসপার্তার শান্ত প্রকৃতি, নির্মল বাতাস, নতুন ভাষা, তুর্কি আতিথেয়তা—সব মিলিয়ে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ছিল দারুণ।

ইসপার্তা একটি মাঝারি শহর হলেও এতে প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ভর্তি কার্যক্রম এবং স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতা নিয়ে আমি আলাদা করে লিখব পরবর্তী ব্লগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *